দুপুরে ব্রেকআপ, রাতে বিয়ে... নয় বছর পর হৃদয় ভাঙার গল্প! ভালোবাসার শেষ দৃশ্য
বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ব্রেকআপ করে বাসায় ফিরেছি। মনে হচ্ছিল—জীবনটা যেন এক অসম্পূর্ণ নাটক!
ঠিক তখনই মা জানালেন, বিকেলে আমাকে দেখতে আসবে এক পাত্রপক্ষ।
মাথার ভেতর হালকা ঝড় উঠলো। ভাবলাম, “এই তো সুযোগ! রাহাতকে একটু দেখাই যাক—সে বলেছিল, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন কাউকে জুটিয়ে দেখাও দেখি!’”
আমি মুচকি হেসে মনে মনে বললাম, “এক সপ্তাহ নয়, কয়েক ঘণ্টাই যথেষ্ট!”
বিকেলে ভাবী আমাকে সাজিয়ে দিলেন—লাল শাড়ি, হালকা মেকআপ, কানে ছোট দুল। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকেই চিনতে পারছিলাম না।
পাত্রপক্ষ এলো, হাসিমুখে প্রশ্ন করলো, আর আমি নিচু চোখে বসে রইলাম। তাদের মুখ দেখে বুঝলাম, তারা আমাকে পছন্দ করেছে।
ঠিক তখন ছেলের চাচি বললেন,
“ছেলে-মেয়ে একটু আলাদা কথা বলুক না?”
ভাবলাম, এই তো পারফেক্ট সুযোগ! আমি ঘরে বসলাম, কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে পাত্র ঢুকলো।
আমি নিচু গলায় বললাম,
“আপনি যদি আমাকে সত্যি পছন্দ করেন, একটা সেলফি তুলি? স্মৃতি হিসেবে রাখবো।”
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠ ভেসে এলো—
“সেলফি তুলবে? দুপুরে ব্রেকআপ হওয়া এক্সকে দেখানোর জন্য?”
চমকে তাকিয়ে দেখি—রাহাত!
তার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, চোখে আগুন।
সে বললো,
“ভাবছো, দু’বছর প্রেমের পর তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করবে? আমি বেঁচে থাকতে সেটা হবে না। বিয়ে হবে—তবে আমার সাথেই, আজই!”
আমি বিস্ময়ে বললাম,
“তুমি পাগল নাকি? দুপুরেই তো আমাদের ব্রেকআপ হলো!”
রাহাত হেসে বললো,
“গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড শেষ, এখন শুরু হবে হাসবেন্ড-ওয়াইফ সম্পর্ক।”
সেই রাতেই অল্প পরিসরে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কেমন করে সবাইকে রাজি করালো—আজও জানি না।
রাগ, অভিমান সব গলে গেলো। ভাবতেই হাসি পেলো—দুপুরে ব্রেকআপ, রাতে বিয়ে!
🌸 নয় বছর পর...
আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। সকাল থেকেই রাহাতের পছন্দের রান্না করছি, কেকও এনেছি।
রাহাত অফিসে, আমি উচ্ছ্বসিত।
বিকেলে শাশুড়ি বললেন,
“এত আয়োজন কেন?”
আমি হেসে বললাম,
“আজ আমাদের বিয়ের দিন মা।”
তিনি ঠান্ডা স্বরে বললেন,
“নয় বছর হলো, এখনো মা হতে পারলে না। ছয় মাসের মধ্যে সুখবর না দিলে রাহাতের আবার বিয়ে দেবো।”
কথাগুলো যেন বুকের ভেতর ছুরি হয়ে বিঁধলো। কেকটা হাত থেকে পড়ে গেলো, চোখ ভিজে উঠলো।
রাতে রাহাত ফিরলো দেরিতে। আমি ঘর অন্ধকার করে বসে আছি।
সে শুধু বললো,
“আমি বাইরে খেয়ে এসেছি।”
আজকের দিনটা সে ভুলে গেছে!
যে একসময় আমার হাত ধরে খাবার খেত, আজ সে অন্য জগতে।
🕯 সাত মাস পর...
রাহাত এখন অন্য মানুষ। সারাদিন বাইরে, রাতে ফোনে ব্যস্ত।
আমাদের কথাবার্তা কেবল প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ।
একদিন দেখি, শাশুড়ি খুব ব্যস্ত হয়ে কোথাও যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করতেই বললেন,
“ফিরে এলে জানতে পারবে।”
রাত সাড়ে আটটার দিকে দরজার বেল। দরজা খুলতেই দেখি—রাহাত, তার পাশে এক তরুণী, মাথায় লাল ওড়না।
শাশুড়ি বললেন,
“ভেতরে আসো, এটাই এখন আমাদের নতুন বউ।”
আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
রাহাত বললো,
“তিশা, ভয় পেও না। ওর নাম আলিশা। মা চেয়েছে আমি আবার বিয়ে করি—শুধু একটা সন্তানের জন্য।”
আমি নীরবে শুনলাম। ঠোঁটে কষ্টের হাসি ফুটলো।
বললাম,
“নতুন বউ অপেক্ষা করছে, যাও।”
🌅 পরের সকাল...
সকালবেলা আমি নাস্তা বানালাম। সবাই খাচ্ছে, আমি শুধু পরিবেশন করছি।
রাহাত বললো,
“তুমি বসে খাও।”
আলিশাও মিষ্টি হেসে বললো,
“আপু, আপনি বসুন।”
শেষবারের মতো ওদের পাশে বসে খাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করলাম।
তারপর নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগটা টেনে আনলাম।
শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন,
“কোথায় যাচ্ছো এত ভোরে?”
আমি কিছু বললাম না।
রাহাত এগিয়ে এসে বললো,
“তিশা, আমি তো বলেছি তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না!”
আমি শান্ত গলায় বললাম,
“ভালোবাসা ভাগ করা যায় না, রাহাত। তাই চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে একটা উপহার দিচ্ছি।”
ছোট্ট কিটটা ওর হাতে দিলাম। খুলে দেখলো—দুটি লাল দাগ।
সে স্তব্ধ হয়ে গেলো,
“তুমি মা হতে যাচ্ছো? আগে বলোনি কেন?”
আমি চোখে জল নিয়ে হেসে বললাম,
“গতকাল বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন তুমি অন্য খবর এনেছিলে। এখন আল্লাহ তোমার সেই ‘আশা’ পূরণ করুক।”
বেরিয়ে গেলাম। পেছনে শুধু শুনলাম,
“তিশা... থামো!”
কিন্তু আমি থামিনি।
কারণ একবার ভালোবাসা ভেঙে গেলে শব্দ থাকে, কিন্তু অর্থ হারিয়ে যায়।
এখন আমি আমার সন্তানকে নিয়ে একা থাকি।
কখনও ভাবি, দোষটা কার ছিল?
তবু প্রতিদিন সূর্য উঠলে মনে হয়—
হয়তো কোনো এক ভোরে, সব ব্যথা ধুয়ে যাবে আলোয়।
কোন মন্তব্য নেই