Header Ads 720=90

খাগড়াছড়ি অশান্তির ছায়ায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন: 'ভুল অভিযোগ' বলে খারিজ করল দিল্লি

 


ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চলমান অশান্তির মধ্যে দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ভারতকে এই অশান্তির জন্য দায়ী করেছে বলে অভিযোগ করে এক ঝড় তুলেছে। কিন্তু দিল্লি থেকে এসেছে কড়া জবাব: এসব 'ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা' দাবি। খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক সহিংসতা, যা স্থানীয় জাতিগত সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে, এখন শুধু স্থানীয় ইস্যু নয়—এটা দু'দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই ঘটনার পটভূমি খুঁজে দেখলে বোঝা যায়, খাগড়াছড়িতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে উত্তেজনা। স্থানীয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএনএস) এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছে, এবং কিছু জায়গায় সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন যে, এর পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাত রয়েছে, যারা স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানি দিচ্ছে। এই দাবি উত্থাপিত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) তা 'পুরোপুরি অস্বীকার' করে বলেছে, "এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে উচিত স্থানীয় চরমপন্থীদের তদন্ত করা, যারা এই অশান্তির জন্য দায়ী।" ভারতের এই প্রতিক্রিয়া শুধু কূটনৈতিক নয়, এতে একটা সতর্কবাণীও রয়েছে: "আমরা নিজেদের অন্তর্মুখী হয়ে দেখা উচিত।"

এই ঘটনা শুধু খাগড়াছড়ির সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার খবরও চোখে পড়ছে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে, যা মোহাম্মদ ইউনুস 'ফেক নিউজ' বলে খারিজ করেছেন। তিনি বলেছেন, "এই ধরনের খবরগুলি আমার নজরদারির অধীনে ঘটেনি, এগুলো অতিরঞ্জিত।" কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ইস্যুতে উদ্বিগ্ন, এবং এটা ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই অভিযোগগুলি তাদের 'প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের ভূমিকা'কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, যা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করে এসেছে।

পাহাড়ি অঞ্চলের এই অশান্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথেও জড়িত। ২০০০ সালের শান্তি চুক্তির পরও পার্বত্য অঞ্চলে উত্তেজনা কমেনি, এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এটা নতুন করে উঁকি দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা দু'দেশের মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সহযোগিতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। একদিকে বাংলাদেশ জাপানের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির দিকে এগোচ্ছে, যা নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এই চুক্তিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এআই এবং সোশ্যাল মিডিয়া অপব্যবহার রোধের পরিকল্পনা করছে, যা এই ধরনের অভিযোগের প্রসার রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দু'দেশের মধ্যে খোলামেলা সংলাপ ছাড়া এই টানাপোড়েন আরও গভীর হতে পারে। ইতিহাস বলে, ১৯৭১-এর যুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা—দু'দেশের সম্পর্ক সবসময়ই পরস্পর নির্ভরশীল। আজকের এই ঘর্ষণ যেন সেই বন্ধুত্বের পরীক্ষা না হয়ে যায়, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আমরা আশা করি, কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো দ্রুত সক্রিয় হবে এবং সত্যতা তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য শান্তি এবং স্থিতিশীলতাই সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। আপনারা কী মনে করেন? কমেন্টে জানান।

রেফারেন্স:

  • Times of India, "India rebukes Bangladesh over Khagrachhari unrest claim" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Firstpost, "'False, baseless': India rejects Bangladesh's charge over Chittagong Hill unrest" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • The Tribune, ""We categorically reject these false and baseless allegations," says MEA" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Times of India, "'Fake news': Yunus plays down violence against Hindu minorities in Bangladesh" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Asia Times, "Dhaka, Tokyo to gain from their defense pact" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Dhaka Tribune, "EC plans strategy to curb AI, social media abuse before polls" (৩ অক্টোবর ২০২৫)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.