Header Ads 720=90

দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী: বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের আনন্দ-আহ্লাদের মাঝে মিশে থাকে ঐক্যের বার্তা

 


ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশের আকাশে আজ বর্ষার শেষ স্পর্শ মিশে গেছে শরতের রঙিন ছোঁয়ায়। দুর্গাপূজা, দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব, গতকাল বিজয়া দশমীর মাধ্যমে সুসমাপন করেছে। পূজার পান্ডাল থেকে বিসর্জনের অবিরাম ধুনুড়ির মাঝে মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির রেখা, আর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ধুনোর সোঁদা গন্ধ মিশ্রিত মিষ্টির মধুর সুবাস। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটা বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক—যেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সবাই মিলে নেচে উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার ছায়ায় এবারের পূজা কি শুধু আনন্দের গল্প, নাকি ঐক্যের এক নীরব আহ্বান?

দুর্গাপূজার এই উদযাপন বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই, যখন দেশজুড়ে হাজার হাজার পান্ডাল গড়ে উঠেছিল। ঢাকার ধানমন্ডি থেকে চট্টগ্রামের অগার্তলা পর্যন্ত, প্রতিটি কোণে মা দুর্গার প্রতিমা সাজানো হয়েছে অপূর্ব শিল্পকর্ম দিয়ে। গতকাল বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মিছিলে যোগ দিয়েছে লক্ষাধিক মানুষ—ঢাক, সিলেট, খুলনা সব জায়গায় নদী-নালায় প্রতিমা ভাসানো হয়েছে। এবারের বিশেষত্ব ছিল সেলিব্রিটিদের অংশগ্রহণ। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন জগতের অনেক পরিচিত মুখ—যেমন অভিনেত্রী পর্ণিয়া মাহমুদ, গায়ক রিফাত শহীদ জগ্গু—পরিবারের সঙ্গে পূজা করেছেন। কেউ কেউ মঞ্চে গেয়েছেন, কেউ বিদেশ থেকে ফিরে এসে মিলিত হয়েছেন এই আনন্দের মহলে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও পিছিয়ে ছিল না; দুরন্ত টিভি-এর মতো শিশু-কেন্দ্রিক চ্যানেলও বিশেষ প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছে, যাতে ছোটরা মাতৃভক্ষণ উপভোগ করতে পারে।

কিন্তু এই উৎসবের পিছনে একটা গভীর দার্শনিক অর্থও রয়েছে। বিজয়া দশমী শুধু মহিষাসুর-বধের গল্প নয়, এটা ভালোর উপর খারাপের জয়ের প্রতীক। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে, এই উৎসবটা একটা শক্তিশালী বার্তা বয়ে আনে: ঐক্যই শক্তি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসও এই উপলক্ষে বলেছেন, "দুর্গাপূজা আমাদের সকলের উৎসব। এটা আমাদের বৈচিত্র্যকে উদযাপন করে।" তাঁর এই কথা এসেছে সেই সময়ে যখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কুমারী পূজার মতো ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানও এবার জোরালো হয়েছে, যা ছোট মেয়েদের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের বার্তা দেয়।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও একটা ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং এই ধর্মীয় উৎসবগুলো সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্গাপূজার এই শান্তিপূর্ণ উদযাপন দেশের বহুত্ববাদী চরিত্রকে শক্তিশালী করে। একদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট চলছে কক্সবাজারে, অন্যদিকে এই উৎসব মানুষকে একত্রিত করছে। এছাড়া, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট টিমের সাম্প্রতিক জয়ও আলোচনায় এসেছে—আজই সকালে আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে তারা ৭ উইকেটের বিজয় অর্জন করেছে। এটা যেন উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজকের এই বিজয়া দশমী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশের মানুষের জীবন যতটা বৈচিত্র্যময়, ততটাই শক্তিশালী। পূজার অবসান হলেও, এর বার্তা থেকে যাবে—ভালোবাসা এবং ঐক্যের জয়। আপনারা কীভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছেন? কমেন্টে শেয়ার করুন, এবং আরও খবরের জন্য আমাদের সাথে থাকুন।

রেফারেন্স:

  • The Daily Star, "Durga Puja ends with Bijoya Dashami celebrations" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Dhaka Tribune, "Hindu community celebrates Kumari Puja amid Durga Puja festivities" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • UNB, "Durga Puja 2025: A festival of unity in turbulent times" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Al Jazeera, "Bangladesh's Durga Puja: Blending tradition and modern celebrations" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • TBS News, "Celebrities join Durga Puja festivities across Bangladesh" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • The Daily Star, "Bangladesh women crush Pakistan in ICC Women's World Cup opener" (৩ অক্টোবর ২০২৫)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.