Header Ads 720=90

বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে ডিজিটাল যুদ্ধ: এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধে নির্বাচন কমিশনের নতুন পরিকল্পনা

 

ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে, ততই জোরালো হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তথ্যের যুদ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর, মিথ্যা প্রচারণা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি ডিপফেক ভিডিওর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি নতুন কৌশল ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য এআই এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধ করে একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, তারা এআই-চালিত টুলস ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করবে। এর মধ্যে রয়েছে ভুয়া ভিডিও, ফটো এবং প্রচারণামূলক পোস্ট। ইসি’র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা একটি ডেডিকেটেড টিম গঠন করেছি, যারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া, ফেসবুক, এক্স এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ক্ষতিকর কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করছি।” এই উদ্যোগের পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি রোধ করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর জনগণের আস্থা বজায় রাখা।

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি খাগড়াছড়ির অশান্তি নিয়ে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছিল। এছাড়া, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অতিরঞ্জিত খবরও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস ‘ফেক নিউজ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এখন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-এর অপব্যবহার নির্বাচনের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো প্রার্থীর মুখে ভুয়া বক্তব্য বসিয়ে ভিডিও তৈরি করা যায়, যা ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল হাসান বলেন, “এআই-এর দ্বারা তৈরি কনটেন্ট শনাক্ত করা কঠিন, কারণ এগুলো খুবই বাস্তবসম্মত। তবে আমাদের দেশে এখনো এই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সংস্থান কম।” তিনি আরও জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিডিয়া সাক্ষরতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

ইসি’র এই পরিকল্পনা নিয়ে জনমতও বিভক্ত। কেউ কেউ মনে করেন, এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্যদিকে, কিছু নাগরিক অধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, এই ধরনের নজরদারি বাকস্বাধীনতার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট রিয়া আক্তার বলেন, “আমরা চাই স্বচ্ছ নির্বাচন, কিন্তু এর নামে যেন সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না হয়।”

এই ডিজিটাল যুগে নির্বাচন কেবল ভোটের বাক্সে সীমাবদ্ধ নয়—এটা এখন স্মার্টফোনের পর্দায়ও লড়াই হচ্ছে। ইসি’র নতুন কৌশল কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ এখন প্রযুক্তির হাতে। আপনারা কী মনে করেন? সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? কমেন্টে জানান।

রেফারেন্স:

  • Dhaka Tribune, "EC plans strategy to curb AI, social media abuse before polls" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • The Daily Star, "Fake news and deepfakes: Bangladesh gears up for digital election battle" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • UNB, "Election Commission to collaborate with tech firms to tackle misinformation" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • Prothom Alo, "Concerns over freedom of speech amid EC’s new AI strategy" (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • BBC Bangla, "How AI is shaping Bangladesh’s upcoming elections" (৩ অক্টোবর ২০২৫)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.